আগস্ট থেকে ইইউ-মেক্সিকোর পণ্যে ৩০ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা ট্রাম্পের

আগস্ট থেকে ইইউ-মেক্সিকোর পণ্যে ৩০ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা ট্রাম্পের

 এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার মেক্সিকো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পণ্যের ওপর ৩০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। এতে যুক্তরাষ্ট্রের দুই বড় বাণিজ্য অংশীদারের সঙ্গে চলমান উত্তেজনাকর আলোচনার ঝুঁকি অনেক বেড়ে গেল।
ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফরমে প্রকাশিত আনুষ্ঠানিক চিঠিতে জানান, এই নতুন শুল্ক কার্যকর হবে ১ আগস্ট থেকে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ মাদক পাচারে মেক্সিকোর ভূমিকা এবং ইইউর সঙ্গে বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতাকে এই শুল্ক আরোপের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।

 

এই সিদ্ধান্তের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে উভয় অংশীদার। ইইউ হুঁশিয়ারি দিয়েছে, এই শুল্ক সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটাবে। তবে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী থাকবে বলেও জানিয়েছে। অন্যদিকে মেক্সিকো একে ‘অন্যায় চুক্তি’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ট্রাম্প মিত্র ও প্রতিদ্বন্দ্বী—উভয়ের ওপরই ব্যাপক শুল্ক আরোপ করেছেন, ফলে আর্থিক বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে এবং বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা বেড়েছে। তবে তার প্রশাসনের ওপর বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের চাপ বাড়ছে। কারণ তারা একাধিক চুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র কেবল ব্রিটেন ও ভিয়েতনামের সঙ্গে দুটি চুক্তি ঘোষণা করেছে, পাশাপাশি চীনের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক কিছুটা কমানো হয়েছে সাময়িকভাবে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো-কানাডা চুক্তির (ইউএসএমসিএ) আওতায় যেসব পণ্য আসে, সেগুলো এই শুল্কের আওতামুক্ত থাকবে।

ট্রাম্প মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শিনবাউমকে লেখা চিঠিতে বলেন, ‘মেক্সিকো সীমান্ত সুরক্ষায় আমাকে সহায়তা করেছে, কিন্তু তারা যা করেছে, তা যথেষ্ট নয়। ২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা মেক্সিকান পণ্যে ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।’

মেক্সিকান সরকার জানিয়েছে, শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রে আলোচনার সময় তারা এই হুমকির কথা জানতে পেরেছে।

দেশটির অর্থনীতি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা আলোচনায় বলেছি, এটি একটি অন্যায় চুক্তি এবং আমরা একমত নই।’
এ ছাড়া ইইউ ক্ষেত্রে এই শুল্ক এপ্রিল মাসে ঘোষিত ২০ শতাংশ শুল্কের তুলনায় আরো বেশি, যদিও তাদের সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়া এখনো চলমান। ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন ট্রাম্পের চিঠির জবাবে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ইইউর রপ্তানিতে ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হলে এটি অত্যাবশ্যকীয় আন্ত আটলান্টিক সরবরাহ চেইনকে ব্যাহত করবে, যার ফল ভোগ করতে হবে দুই পক্ষের ব্যবসায়ী, ভোক্তা ও রোগীদের।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ১ আগস্টের আগেই একটি চুক্তির লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যেতে প্রস্তুত। একই সঙ্গে ইইউর স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ আমরা নেব, যার মধ্যে প্রয়োজন হলে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়াও রয়েছে।’

সংকটপূর্ণ মুহূর্ত
ইইউ ও আরো অনেক দেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক এই বুধবার ১০ শতাংশ থেকে বাড়ার কথা থাকলেও ট্রাম্প সময়সীমা পিছিয়ে ১ আগস্ট করেছেন। সপ্তাহের শুরু থেকে ট্রাম্প ২০টির বেশি দেশে নতুন শুল্ক হারের চিঠি পাঠিয়েছেন, যার মধ্যে কানাডার জন্য ৩৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ইউএসএমসিএর আওতায় থাকা কানাডার পণ্য এই শুল্ক থেকে মুক্ত থাকবে বলে এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

ব্রাসেলস বৃহস্পতিবার জানায়, তারা ওয়াশিংটনের সঙ্গে চুক্তি করতে প্রস্তুত, যাতে করে ২০ শতাংশ শুল্ক হার ফিরিয়ে না আনা হয়।

ট্রাম্প বছরের শুরুর দিকে স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর পৃথক শুল্ক আরোপ করার পর ইইউ পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে দুই হাজার ১০০ কোটি ইউরোর মার্কিন পণ্যে শুল্ক আরোপের প্রস্তুতি নিয়েছিল, যা আপাতত ১৪ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত রয়েছে। ইউরোপীয় কর্মকর্তারা এখনো এই স্থগিতাদেশ বাড়ানোর কোনো পদক্ষেপ নেননি। তবে প্রয়োজনে তা দ্রুত করা সম্ভব।

আটলান্টিক কাউন্সিলের আন্তর্জাতিক অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান জোশ লিপস্কি বলেন, ‘চুক্তির দিকে অগ্রগতি সত্ত্বেও এই হুমকি দেখায় যে ইইউও এখন বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই অনিশ্চয়তার মুখে রয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, এখন ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে ইইউ কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানায় তার ওপর এবং এটিই ‘এই বাণিজ্যযুদ্ধের সবচেয়ে জটিল মুহূর্তগুলোর একটি’।

inside-post
আরো দেখুন