ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের সড়ক রক্ষা বাধের মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে ইটভাটা মালিকরা, রয়েছে সড়ক ভাঙার আশঙ্কা !
নিজস্ব প্রতিবেদক ২৫ জানুয়ারি ২০২৫
ঢাকা চট্টগ্রাম মহা সড়কের পাশে সড়ক রক্ষা বাধের মাটি নিয়মিত কেটে নিয়ে যাচ্ছে ইটভাটা মালিকরা। এতে বর্ষার মৌসুমে সড়ক ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
সেই সঙ্গে ইটভাটায় পরিবহনের কাজে নিয়োজিত ট্রাক থেকে মাটি পড়ে সড়কের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। যার ফলে কুয়াশা বা হালকা বৃষ্টিতে সড়ক কর্দমাক্ত হয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনা হতে পারে মন্তব্য করেছেন চালক ও স্থানীরা।
এমনি চিত্র দেখা যায়, ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার উত্তর বাবুর্চি (সৈয়দপুর) এলাকায় মেসার্স সিটি ব্রিকস্ ও মেসার্স সাকুরা ব্রিকস্ ম্যানুফ্যাকচার ইটভাটার সামনে।
দেখা যায়, মহাসড়ক ঘেষা গড়ে উঠা ইটভাটা দুটির মালিকরা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা অভিমুখী লাইনে পশ্চিম পাশে ২০ ফুট, ২০ ফুট করে অন্তত ৪০ ফুট মহাসড়ক কেটে ফেলেছে ওই ভাটার মালিকরা। এতে করে বর্ষার মৌসুমে সড়ক ভেঙে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার উত্তর বাবুর্চি (সৈয়দপুর) এলাকায় সরকারি বিধিমালার তোয়াক্কা না করে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে গাজী আনোয়ার হোসেন নামের এক প্রভাবশালী মেসার্স সিটি ব্রিকস্ ও আল রায়হান ওরফে আলকাছ নামের আরেক প্রভাবশালী মেসার্স সাকুরা ব্রিকস্ ম্যানুফ্যাকচার ইটভাটা গড়ে তুলেছেন। ভাটা দুটি রয়েছে পাশাপাশি। গাজী আনোয়ার হোসেন তার ভাটার সামনে অন্তত ২০ ফুট মহাসড়কের বাধের মাটি কেটে নিয়ে গেছে। তার পাশে থাকা আল রায়হান ওরফে আলকাছও অন্তত ২০ ফুট মহাসড়ক বাধের মাটি কেটে নিয়ে গেছে।
সেই সঙ্গে ইট তৈরির জন্য ট্রাক্টর বা ড্রামট্রাক করে
মাটি আনতে গিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা অভিমুখী লাইনে প্রায় ২ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে থোকায় থোকায় পড়ে আছে মাটি। কোন যানবাহন গেলেই বাতাসে উড়ে ধুলো। কুয়াশা বা হালকা বৃষ্টি হলে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। অথচ ওই দুটি ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের নেই কোন ছাড়পত্র। অবৈধ ভাবে বছরের পর বছর ভাটা চালিয়ে যাচ্ছেন বহাল তবিয়তে।
স্থানীয়রা জানান, ভাঁটায় ইট তৈরির জন্য কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় ফসলি জমির মাটি। জমি থেকে খননযন্ত্র (স্কাভেটর) দিয়ে মাটি কেটে ট্রাক্টর ও ড্রামট্রাকে করে এসব মাটি পরিবহন করা হয়।
বহনের সময় গাড়ি থেকে পড়া মাটি বৃষ্টির পানিতে কাদায় পরিণত হয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে বিভিন্ন যানবাহন। বৃষ্টির পানিতে পাকা সড়কের ওপর পড়ে থাকা ওই মাটি কাদা হয়ে মরনফাঁদে পরিণত হয়। এতে এসব সড়কে চলাচল করা যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ছে।
এ বিষয় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা স্টার লাইন বাস চালক ইকবাল হোসেন বলেন, সড়কের ঝুরা মাটি পড়ার ফলে হালকা বৃষ্টি হলে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে যায়। পিচ্ছিল হওয়া স্থানে ব্রেক করলে বাস উল্টে যাওয়া সম্ভাবনা থাকে।
মোটরসাইকেল চালক সোহেল রানা বলেন, মাটি কেয়ারিং করে সড়ক নষ্ট করে ফেলে। দেখা গেছে একটা সড়ক এক বছরও টিকে না। বর্ষার মৌসুমে মোটরসাইকেল চাকলরাই বেশি দুর্ঘটনার স্বীকার হয়। এ ভাটার মালিকরা মহাসড়ক শেষ করে দিয়েছে। সরকার তাদের কিছুই করে না।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মেসার্স সাকুরা ব্রিকস্ ম্যানুফ্যাকচার ইটভাটা মালিক আল রায়হান ওরফে আলকাছ বলেন, আমি জমিন বরাবর সড়কের পাশে থেকে মাটি কেটে নিয়েছি, সড়ক কাটিনি। আপনারা সাংবাদিকরা যা পারেন লিখেন। আমাদেরও সাংবাদিক রয়েছে, তারা ভালো লিখবে।
মেসার্স সিটি ব্রিকস্ মালিক গাজী আনোয়ার হোসেন বলেন, শুধু আমি মহাসড়কের পাশ কাটিনি আমার পাশে আরো অনেকে মাটি কেটেছে তাদের ধরেন। মহাসড়কে মাটি ফেলার বিষয়ে সঠিক কোন উত্তর দেননি তিনি।
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, মঙ্গলবার রাতে গাড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় ঘটনাটি দেখেছি। ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। নিয়মিত মামলা দেয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে।
এ বিষয়ে কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তর উপপরিচালক মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজিব বলেন, এ ভাটার কোনো ছাড়পত্র নেই। আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।
কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, এখনি লোক পাঠাচ্ছি। তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
সড়কে মাটি ফেলার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ট্রাক থেকে পড়া ভেজা মাটির ফলে সড়কের বিটুমিন নষ্ট হয়ে যায়। এতে সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়। আমরা সংশ্লিষ্ট ভাটা মালিক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের বিষয়টি অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার জন্য সড়ক বিভাগ থেকে চিঠি দিয়েছি।
এ বিষয়ে কুমিল্লা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ফাহমিদা মোস্তফা বলেন, মহাসড়কের ওপর মাটি ফেলার ফলে হালকা বৃষ্টি হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। মহাসড়কের পাশের মাটি কাটা বড় ধরনের অপরাধ। স্থানীয় ইউএনওকে পাঠিয়ে প্রয়োনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হবে।
হাইওয়ে চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি খাইরুল আলম বলেন, মহাসড়ক কাটায় আগামী শনিবার সরেজমিন গিয়ে পরিদর্শন করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল: +৮৮০১৭১১৯৯৭৯৫৭
ইমেইল: sahabibcomilla@gmail.com
24newstv.tv