নিজস্ব প্রতিবেদক ,কুমিল্লা ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বিএনপি এর সুনাম বিনষ্ট করতে পারলে একটি সংঘবদ্ধ জনগোষ্ঠী লাভবান হচ্ছে। ৫ আগষ্ট পরবর্তীতে ঐ সংঘবদ্ধ চক্রটি বিভিন্ন মোড়কে বিএনপির বিরুদ্ধে অবস্থান সুস্পষ্ট করেছে। বিএনপিকে নিজেদের নেতৃত্বের প্রতিযোগিতাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে অন্তঃকোন্দল তথা গ্রুপিং ট্যাগিং করতে। একটি সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে বিভিন্ন নতুন নতুন রাজনৈতিক দলের মোড়কে একই বিষয় নিয়ে সামনে এসেছে, উদ্দেশ্য একটাই- বিএনপি এর নেতৃত্বের প্রতিযোগিতাকে গ্রুপিং হিসেবে নেগেটিভভাবে উপস্থাপন করা।
ডাকসু/জাকসু নির্বাচনেও কিন্তু ঐ গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রের ব্যতিক্রম হয় নি। ঐ নির্দিষ্ট রাজনৈতিক গোষ্ঠী নিজেদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের আড়ালে গুপ্ত রাজনীতি করে, ছাত্রলীগে নিজেদের বিগত সময়ে পদধারণকে করে বৈধ, কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে প্রথমে ছাত্রদলকে দল গোছাতে বাধা দেওয়ার মতো গভীর ষড়যন্ত্রে ছিল ঐক্যবদ্ধ। আর, সেই সময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে থেকে নিজেদের দলীয় এজেন্ডা নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীর সমর্থন নেয় অরাজনৈতিক ক্যাম্পাস গঠনের জন্য, কিন্তু সময়মত ছাত্রলীগের খোলস পালটে যেমন সামনে আসে, তেমনি জটিল ষড়যন্ত্র সরল অংকে পরিণত হয়... সেই অরাজনৈতিক ক্যাম্পাসের দাবিতে অনড় থাকা শিক্ষার্থীদের উস্কে দেয় রাজনৈতিক ব্যানারে ডাকসু ইলেকশনের... ফলাফল, জাতীয়তাবাদ ও স্বচ্ছ প্রকাশ্য রাজনৈতিক শক্তির ভূমিধ্বস পরাজয়.
সামনে জাতীয় নির্বাচন, ঐ গুপ্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিভূরা ব্যস্ত দেশকে পি আর নামক এক অলীক ধারণায় ব্যস্ত রাখতে অনলাইন/অফলাইনে সুষ্ঠু জনমত তৈরিতে, আর সেক্ষেত্রে পাশে রেখেছে একই মতের ভিন্ন মতাদর্শের সহযোদ্ধাদের যারা দিনশেষে ঐ সুনির্দিষ্ট দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধ!! আর বিএনপি বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী তথা দেশের সার্বভৌমত্ব যেন বিনষ্ট না হয় সে লক্ষ্যে সদাজাগ্রত, কিন্তু তার দলীয় সাংগঠনিক কার্যক্রম কি হচ্ছে? দেশনায়ক তারেক রহমান কিন্তু ব্যস্ত সাংগঠনিক সম্মেলন করে দল গোছাতে, শৃংখলা বহির্ভূত কার্যক্রমে ব্যবস্থা গ্রহণে... আর বট বাহিনী ব্যস্ত তারেক রহমানের এসব কার্যক্রমকে প্রশংসিত না করে গ্রুপিংকে প্রতিষ্ঠিত করাতে... বিএনপি একটি বৃহত জনগোষ্ঠীর দল... এ দলে গত ১৭ বছর অনেকেই ছিলো, সবাই কি ভালো ছিলো? না, অকপটে স্বীকার করেছেন দলীয় হাইকমান্ড ও, দলে সবাই ঐক্যবদ্ধ ছিলেন শুধুমাত্র ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে। কিন্তু, ঐ রাজনৈতিক দলটি ফ্যাসিস্টের সাথে আতাতের রাজনীতিতে মধু খেয়েছে যা।
ক্ষেত্রবিশিষে প্রতীয়মান। আর ৫ আগষ্টের পর তারা দুইটি কাজে ব্যস্ত ১। অনলাইন/অফলাইনে বিএনপি কে বুলিং কিংবা ব্যাশিং এর প্রতিযোগিতায়. ২। ফ্যাসিস্টের দোসরদের নিরাপদ আশ্রয় দিয়ে ত্রাণকর্তার ভূমিকায় এসে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধি...(এক্ষেত্রে, প্রথাগত রেওয়াজ থেকে বের হয়ে, তাদের ইসলামি আদর্শিক ধারা থেকে বিচ্যুত হয়ে নারী নেতৃত্বকে জায়েজ করেছে পর্যন্ত ডাকসু ইলেকশনে যা সুস্পষ্ট...)
সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লার ঐক্যবদ্ধ ড্যাব তথা জাতীয়তাবাদি চিকিৎসকগণের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি বিনষ্টকরণে ঐ সংঘবদ্ধগোষ্ঠীর সুস্পষ্ট ইন্ধন রয়েছে, যা আমাদের অনুসন্ধানী রিপোর্টে সুস্পষ্ট প্রতীয়মান। এর সাথে ফ্যাসিস্ট দোসরদের পরোক্ষ সমর্থন পরিলক্ষিত হয়েছে। আসুন দেখি, আমরা এক হতে পারি কিনা?
কুমিল্লা মহানগর ড্যাবের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা আরিফ হায়দার তার রাজনৈতিক যাত্রাকালেই ছিলো দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত, যার বিপক্ষে বিগত সময়ে অনঢ় ছিলো তার কুমেকের দুঃসময়ের কর্মীরা, কারণ তারা কেউই নিজেদের প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় নি উনার নেতৃত্ব থেকে... দলের দুঃসময়ে সকল জাতীয়তাবাদি শক্তিকে ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ রাখতে, প্রতিবাদে পাশে রাখতে ডা আরিফের মতো দলকানা মানুষকে কাছে নেন জেলা ড্যাবে সভাপতি ডা মাসুম। যেহেতু, ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী আন্দোলনে দলীয় কর্মসূচি পালনের বাইরে কোন প্রতিযোগিতা ছিলো না, সেহেতু ডা আরিফ হায়দারের অসৎ উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট ছিলো না কারো নিকটই। ৫ আগষ্ট পরবর্তীতে, গত ৯ই আগষ্ট ২০২৫ পর্যন্ত ডা হাসানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকে কুমিল্লা ড্যাবের ৩টি ইউনিটের সর্বাধিক নেতাকর্মী যার ফলশ্রুতিতে ডা হারুন-ডা শাকিল পূর্ণপ্যানেল বিজয় আসে ড্যাব ইলেকশন ২০২৫ এ। পরিচ্ছন্নভাবে ড্যাব কুমিল্লা গঠনের জন্য যখন কাজ শুরু হয়, তখনই প্রতীয়মান হয় ডা আরিফের দুর্নীতির ছায়াচ্ছবি এবং ডা তারেকের পরামর্শে ডা হাসানের দুর্নীতিবাজদের জন্য জিরো টলারেন্স নীতি। ডা আরিফ হয় বাধাগ্রস্থ, রাজনৈতিকভাবে অবস্থানে থাকা ঐ বিরোধী শিবিরের প্রতিষ্ঠানে চলে যায় এ কথা। শুরু হয়, জাতীয়তাবাদি আদর্শের চিকিৎসকদের প্রতিষ্ঠান ড্যাব কে ইমেজ সংকটে ফেলার নীলনকশা। রচিত হয়, কিভাবে ড্যাবকে বিতর্কিত করায় ড্যাবকে কাজে লাগিয়ে আগামী দিনের চিকিৎসকগণকে নিজেদের দলে সামিল করা যায়। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগেই ৪৮তম বিসিএস পরীক্ষায় প্রায় ৩০০০ চিকিৎসক উত্তীর্ণ হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ২৩৫ এর অধিক চিকিৎসক শুধু কুমিল্লা থেকে উত্তীর্ণ। এ নবীন চিকিৎসকগণের নিকট ড্যাবকে একটি (বিশেষভাবে কুমিল্লা ড্যাব) বিতর্কিত সঙ্ঘঠন হিসেবে উপস্থাপন করার সুবর্ণ সুযোগ।
ডা হাসানের সুস্পষ্ট ক্লিন ইমেজকে তখন প্রশ্নবিদ্ধ করতে তাই উক্ত বিরোধীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠানে অবস্থানকারী ড্যাব নেতাকে ব্যবহার করা হয়, ষড়যন্ত্রের প্লট সাজানোর জন্য। আর ডা হাসানের বিরুদ্ধে ডা আরিফ হায়দারকে অভিযোগ করার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনফারেন্স কক্ষে ড্যাব মেডিকেল কলেজ শাখার ব্যানারে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা ডাকেন। ডা আরিফ হায়দারকে না জানিয়ে উক্ত সভায় সাংবাদিকগণের উপস্থিতিতে তার অভিযোগ ধারণ করেন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। ডা আরিফের করা নো বলে ফ্রী হিট পেয়ে যায় ঐ রাজনৈতিক দল ও তার সহযোগীরা... বিভিন্ন ব্যানারে (কখনো এনডিএফ/ কখনো সাধারণ জনতা/ কখনো ছাত্র জনতা) তারা প্রতিদিন ডা মাসুমকে কেন্দ্র করে ড্যাব তথা বিএনপি কে বিতর্কিত করায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
গোপন সূত্রে জানা গেছে যে, ডা আরিফের দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্পর্শকাতর এ বিষয়ের প্রতিবাদ সভা সম্পূর্ণ গোপনীয়তার সহিত কনফারেন্স কক্ষে ড্যাবের চিকিতসকগণের মধ্যে হবে বলে মেডিকেল কলেজ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আস্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পরিচালনায় উক্ত প্রতিবাদ সভায় শুধুমাত্র ড্যাবের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে পুরো সভায় চিকিৎসক ছাড়াও নার্স কর্মচারী এমনকি ১ম-৫ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে সভা পরিচালনা করেন, এমনকি সাংবাদিকগণকে সামনে রেখে উক্ত পুরো
সভা পরিচালিত হয়!!! সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কিভাবে একটি স্পর্শকাতর বিষয়ের মিটিং করার পূর্বে সর্বোচ্চ গোপনীয়তা নিশ্চিত না করে সভা পরিচালনা করেন??? এ কেমন সাংগঠনিক অদক্ষতা?? নাকি ঐ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে, ড্যাবের ভাবমূর্তি বিনষ্টে এই সাজানো পূর্ব পরিকল্পিত পরিকল্পনা?
নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলে কারো পাতানো ফাঁদ.
সাধারণত ড্যাবের একটি ইউনিট অন্য একটি ইউনিটের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে হলে কেন্দ্রীয় ড্যাবের অনুমতি প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই প্রতিবাদ সভার জন্য কি সে অনুমতি নেওয়া হয়েছিলো? যদি না হয়ে থাকে, তাহলে উপরের মতো এখানেও জটিল অংক সহজ ও সরল... যেহেতু ঐ ড্যাব নেতা সস্ত্রীক ঐ বিরোধীশক্তির হাসপাতালে ২০ বছরের ও অধিক সময় যাবত লালিত-পালিত ও আশীর্বাদে পরিপুষ্ট, সেহেতু তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে সহযোগিতা করা কি নৈতিক দায়িত্বকে এড়িয়ে যেতে পারবেন? হয়তো না... তাই কেন্দ্রীয় ড্যাবের অনুমতি না নিয়ে কুমেক ড্যাবের ব্যানারে ড্যাবের এক নেতার মাধ্যমে অন্য নেতাকে অভিযুক্ত করে বিতর্কিত করার সূক্ষম ষড়যন্ত্রে সহায়তা করেন। কিন্তু, এতে উনার ব্যক্তিগত লাভ ছিলো না কি? অবশ্যই ছিলো হয়তো, ঐ যে ড্যাবে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা... বিগত সময়ের ড্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির কুমিল্লা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে ডা এম এম হাসান (দুর্নীতির জন্য অভিযুক্ত) ও ডা মিনহাজ তারেক দুজনেই হচ্ছেন পরবর্তী কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদপ্রার্থী তথা ভবিষ্যত ড্যাব কুমিল্লার নেতা... ডা মিনহাজ তারেকের আহবানে ডাকা প্রতিবাদ সভায় ডা আরিফ হায়দারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডা মাসুম হাসানের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ড্যাব একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে... স্থগিত করা হয়েছে কুমিল্লাস্থ ড্যাবের ৩টি কমিটিকেই... কিছুদিন আগে ড্যাবের ব্যানারে যেখানে কুমিল্লা মহানগরের সম্মেলনে মেডিকেল টিম কাজ করে, সেখানে দক্ষিণ জেলা বিএনপি এর সম্মেলনে নাম পরিচয়হীনভাবে একই মেডিকেল টিম হয়ে সেবা প্রদান করে জাতীয়তাবাদি চিকিতসকরা... কতটা লজ্জার এ বিষয়টা....
ড্যাবের তরুণ নেতা, ড্যাব মহানগরের সদ্য সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ডা কাউসার আল আমিন বলেন, "হয়তো তদন্তের মাধ্যমে আনীত দুর্নীতির অভিযোগের সত্য মিথ্যা সুস্পষ্টভাবে প্রমানিত হবে, ষড়যন্ত্রের জাল থেকে সত্য উন্মোচিত হবে। কিন্তু, ড্যাবের সঠিক ইমেজ কি ফিরবে আগামী দিনের ড্যাব করতে আগ্রহী তরুণদের নিকট? বিএমএ এর নির্বাচনে কি ড্যাবের ইমেজ সংকট পড়বে না?"
নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় বিরোধী বলয়ের কূট পরামর্শে কেউ স্বার্থসিদ্ধি হাসিল করলেও প্রকৃত লাভবান কে হবে? দল নাকি ব্যক্তি?? এক্ষেত্রে আমাদের শহীদ জিয়ার সেই চিরন্তন কথা ভুলে গেলে হবে না- "ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়..."
স্বাধীনতা বিরোধী ঐ অপশক্তিই তো যারা দেশের সার্বভৌমত্ব অর্জনে বাধাগ্রস্থ করেছিলো তারাই তো, হয়তো বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে পারবে না, কিন্তু বিএনপিকে বিতর্কিত করে তাদের সুস্পষ্ট বিজয়কে দুর্বোধ্য করে তুলতে পারলে ক্ষতি কি?
মোবাইল: +৮৮০১৭১১৯৯৭৯৫৭
ইমেইল: sahabibcomilla@gmail.com
24newstv.tv