শানায়া থেমে গেলেন, রাজকুমার দৌড়াচ্ছেন

শানায়া থেমে গেলেন, রাজকুমার দৌড়াচ্ছেন
বলিউডে অভিষেক, তা–ও আবার কাপুর পরিবারের কন্যা, আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন শানায়া কাপুর। তাঁর প্রথম ছবি ‘আখোঁ কি গুস্তাখিয়াঁ’ ঘিরে প্রত্যাশার পারদ ছিল চড়া। অন্যদিকে, রাজকুমার রাওকে এবার দেখা গেছে একেবারে ভিন্ন মেজাজে, অ্যাকশন হিরো হিসেবে ‘মালিক’ ছবিতে। একই দিনে মুক্তি পেয়েছিল এই দুই ছবি। কিন্তু বক্স অফিসে শানায়ার অভিষেকটা থেমে গেছে ব্যর্থতার সীমানায় আর রাজকুমার ছুটছেন নিজের ক্যারিয়ারের এক নতুন পর্বের দিকে।
শুরুতে ধাক্কা
দীর্ঘদিন ধরে শানায়ার বলিউডে অভিষেক নিয়ে গুঞ্জন ছিল। অবশেষে ‘আখোঁ কি গুস্তাখিয়াঁ’ দিয়ে তা বাস্তব হলো। সঞ্জয় ও মাহিপ কাপুরের কন্যা হিসেবে বলিউডে তাঁর অভিষেককেই অনেকটা রাজকীয় প্রত্যাবর্তন হিসেবে দেখা হচ্ছিল। ছবিটি রোমান্টিক হলেও চেষ্টা ছিল পরিচিত ছকের বাইরে যাওয়ার। শানায়ার বিপরীতে ছিলেন প্রশংসিত অভিনেতা বিক্রান্ত ম্যাসি। ছবির পরিচালক সন্তোষ সিং প্রচারে বলেছিলেন, এই গল্প এক নতুন প্রেমের অনুভব নিয়ে হাজির হবে, যা দর্শকদের ছুঁয়ে যাবে কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন।

মুক্তির পর প্রথম দিনেই স্পষ্ট হয়ে যায় ছবিটি দর্শকের মন জিততে পারছে না। শানায়া-বিক্রান্ত জুটির রসায়ন জমেনি, গল্পকথনে ছিল আলস্য আর আবেগের জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি নির্মাতা। সমালোচকদের রিভিউতেও তা স্পষ্ট ‘ফ্ল্যাট’, ‘বিরক্তিকর’, ‘দ্বিধাগ্রস্ত নির্মাণ’—এই রকম মন্তব্যই ঘুরে ফিরে এসেছে।
বক্স অফিস সংখ্যাও হতাশাজনক। হিসাবটা বলি। শুক্রবার ৩০ লাখ রুপি, শনিবার ৪৯ লাখ রুপি, রোববার: ৪১ লাখ রুপি, মানে ৩ দিনে মোট আয় ১ কোটি ২০ লাখ রুপি। যেখানে ছবির নির্মাণ খরচ প্রায় ৫০ কোটি রুপি, সেখানে এই আয় একেবারেই নগণ্য। সিনেমা হলে দর্শকের আসন ফাঁকা থাকায় অনেক জায়গাতেই প্রদর্শন সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়িক বিশ্লেষকদের মতে, ‘আখোঁ কি গুস্তাখিয়াঁ’ প্রথম সপ্তাহ শেষ হওয়ার আগেই বেশির ভাগ প্রেক্ষাগৃহ থেকে সরে যেতে পারে।
রাজকুমার রাওয়ের দাপুট
‘মালিক’ ছবিতে রাজকুমার রাওকে দেখা গেছে সম্পূর্ণ নতুন এক রূপে। এই ছবিতে তিনি এক প্রতিশোধপরায়ণ যুবকের চরিত্রে, যার অতীত রক্তাক্ত ও ভবিষ্যৎ অন্ধকার। সাধারণত সংবেদনশীল চরিত্রে রাজকুমারকে দর্শক দেখে অভ্যস্ত কিন্তু এবার তিনি এলেন মারকাটারি হিরোর রূপে।

ছবির গল্প যদিও খুব মৌলিক কিছু নয়, গ্যাংস্টার, পুলিশ, প্রতিশোধ—এই ধাঁচের বহু ছবি বলিউডে তৈরি হয়েছে। কিন্তু ‘মালিক’-এর আসল চালিকাশক্তি রাজকুমারের শক্তিশালী উপস্থিতি। তাঁকে ঘিরেই মূলত ছবিটি এগিয়ে গেছে। সমালোচকদের কথায়, ‘গল্পে নতুনত্ব নেই কিন্তু রাজকুমার রাও স্ক্রিনে আসার পর চোখ সরানো যায় না।’
অবশ্য টেকনিক্যাল দিক থেকেও ‘মালিক’ কিছুটা এগিয়ে। অ্যাকশন দৃশ্য, ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর ও ক্যামেরার কাজ প্রশংসা কুড়িয়েছে।
সিনেমাটিতে আরও আছেন মানুষি ছিল্লার আর বিশেষ চমক হিসেবে রয়েছেন টলিউড সুপারস্টার প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়—যাঁকে দেখা গেছে এক পুলিশের চরিত্রে। এই অ্যাকশন ড্রামা ছবিটির ৩ দিনের আয় দেখাচ্ছে দারুণ সূচনা; শুক্রবার ৪ কোটি ২০ লাখ রুপি, শনিবার ৫ কোটি ৪৫ লাখ রুপি ও রোববার: ৫ কোটি ৫৫ লাখ রুপি। ৩ দিনের মোট আয় ১৫ কোটি ২০ লাখ রুপি। চলচ্চিত্র বিশ্লেষকরা বলছেন, ইতিবাচক মুখের কথা এবং রাজকুমারের উপস্থিতির কারণে ‘মালিক’-এর আয় আগামী দিনগুলোতেও চমকে দিতে পারে।
বললে বাড়াবাড়ি হবে না, ‘আখোঁ কি গুস্তাখিয়াঁ’ ছবির ব্যর্থতা আবারও প্রমাণ করল বলিউডে তারকা পরিবার থেকে এলেই সাফল্যের গ্যারান্টি মেলে না। স্টার কিডদের জন্যও এখন বক্স অফিস হলো রূঢ় বাস্তবতার আয়না। অন্যদিকে, রাজকুমার রাও প্রমাণ করলেন, প্রতিভা ও চরিত্রাভিনয়ের মাধ্যমে তিনি নিজের জায়গা বদলাতেও পারেন, চ্যালেঞ্জ নিতে জানেন। তাই এই সপ্তাহের বক্স অফিস গল্পের সারসংক্ষেপ—শানায়া থেমে গেলেন, রাজকুমার দৌড়াচ্ছেন।