রেলে কর্মবিরতির ঘোষণা, প্রত্যাহারের আহ্বান সরকারের

রেলে কর্মবিরতির ঘোষণা, প্রত্যাহারের আহ্বান সরকারের
নিজস্ব প্রতিবেদক ২৭ জানুয়ারি ২০২৫

মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স (ভাতা) যোগ করে পেনশন প্রদান এবং আনুতোষিক সুবিধা দেয়ার বিষয়ে জটিলতার নিরসন না হওয়ায় সোমবার রাত থেকে কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। এতে সোমবার মধ্যরাত থেকে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির ঢাকা বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাঈদুর রহমান বলেন, আমরা আজকে (সোমবার) বিকেলে রেল ভবনে রেল কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করলাম। এই বৈঠকে আমাদের মাইলেজ, রানিং অ্যালাউন্সের কোনো দাবি পূরণের আশ্বাস মেলেনি। তাই রাত ১২টা থেকে আমরা কর্মবিরতিতে যাচ্ছি। রাত থেকে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ। তিনি বলেন, আমরা এর আগে তিনবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে আমরা কর্মবিরতিতে যাব। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বারবার আমাদের আশ্বাস দিয়েছিল যে আমাদের দাবি তারা বিবেচনা করছেন। এবার আমরা আর পেরে উঠলাম না। তাই কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটা কোনো দলীয় অ্যাজেন্ডা নয়। এটি সম্পূর্ণভাবে রেলশ্রমিকদের সুরক্ষার আন্দোলন।
এদিকে ট্রেন চালানো বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাহার করতে বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। রেলওয়ে কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের দাবি আদায়ে রেলপথ মন্ত্রণালয় যথেষ্ট আন্তরিক ও সচেষ্ট বলেও জানানো হয়। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সংবাদ মাধ্যমে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম সিদ্দিকীর পাঠানো গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফরা আগামী ২৮শে জানুয়ারি থেকে কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। ফলে সারাদেশে রেল চলাচলে অচলাবস্থা ও চরম যাত্রী ভোগান্তির আশঙ্কা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও রেলপথ মন্ত্রণালয় তাদের দাবি-দাওয়া/চাহিদা পূরণে যথেষ্ট আন্তরিক ও সর্বোচ্চ সচেষ্ট। ইতোমধ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে রানিং স্টাফদের দাবি-দাওয়াগুলো অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে পত্র যোগাযোগের পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক আলোচনাও অব্যাহত আছে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে ইতোমধ্যে তাদের রানিং এলাউন্স ৭৫ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়া মাইলেজ এলাউন্স পাওয়ার জন্য সর্বনিম্ন ৮ ঘণ্টা ও ১০০ মাইল দূরত্বের শর্তও শিথিল করা হয়েছে। রানিং স্টাফদের অন্যান্য দাবি আদায়ে রেলপথ মন্ত্রণালয় যথেষ্ট আন্তরিক ও সচেষ্ট রয়েছে। এ অবস্থায় পূর্ব ঘোষিত আন্দোলন কর্মসূচী প্রত্যাহার করে রেলের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের সব কর্মকর্তা/কর্মচারীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানানো যাচ্ছে। গণবিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, রানিং স্টাফদের দাবি-দাওয়া আদায়েও রেলপথ মন্ত্রণালয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। যাত্রী সাধারণের ভোগান্তি বিবেচনা করে পূর্ব ঘোষিত আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার এবং আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে রানিং স্টাফরা উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে মন্ত্রণালয় বিশ্বাস করে।
নিয়ম অনুযায়ী একজন রানিং স্টাফ (চালক, সহকারী চালক, গার্ড, টিকিট চেকার) ট্রেনে দায়িত্ব পালন শেষে তার নিয়োগপ্রাপ্ত এলাকায় (হেডকোয়ার্টার) হলে ১২ ঘণ্টা এবং এলাকার বাইরে (আউটার স্টেশন) হলে ৮ ঘণ্টা বিশ্রামের সুযোগ পান। রেলওয়ের স্বার্থে কোনো রানিং স্টাফকে তার বিশ্রামের সময়ে কাজে যুক্ত করলে বাড়তি ভাতা-সুবিধা দেয়া হয়; যা রেলওয়েতে মাইলেজ সুবিধা হিসেবে পরিচিত।