কুমিল্লায় সীমান্তপথে গরু প্রবেশ নিয়ে শঙ্কা স্থানীয় খামারিরা

কুমিল্লায় সীমান্তপথে গরু প্রবেশ নিয়ে শঙ্কা স্থানীয় খামারিরা

নেকবর হোসেন  কুমিল্লা প্রতিনিধি: ২৯মে ২০২৫

inside-post

গত বছরের ঈদুল আজহায় কুমিল্লা নগর ও জেলার ১৭টি উপজেলায় চাহিদার তুলনায় সাড়ে ৯ হাজারের বেশি পশু মজুত ছিল। সীমান্ত জেলা কুমিল্লায় এবারের ঈদুল আজহায় চাহিদার তুলনায় ২৩ হাজারের বেশি পশু বেশি মুজত আছে। এরই মধ্যে ঘনিয়ে আসতে শুরু করেছে পবিত্র ঈদুল আজহা। পর্যাপ্ত পশু মজুতের দিক থেকে কুমিল্লার মানুষ স্বস্তিতে থাকলেও দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়ছে না জেলার ৩৬ হাজারের বেশি খামারির।

খামারিদের ভাষ্য, জেলার পাঁচটি উপজেলার প্রায় ১০৬ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে ভারতের সীমান্ত এলাকা। প্রতিবছরই কোরবানির ঈদের সময় ভারত থেকে অবৈধভাবে কমবেশি গরু কুমিল্লায় প্রবেশ করে। এতে লোকসানের মুখে পড়তে হয় স্থানীয় খামারিদের। গত বছরও ভারতীয় গরু প্রবেশ করায় শেষ পর্যন্ত স্থানীয় খামারিদের অনেক গরু বিক্রি হয়নি।

জেলার বরুড়া উপজেলার বড় হাতুয়া গ্রামের আবু হানিফ গত বছরের ঈদে বিক্রির জন্য অ্যাগ্রো ফার্মে দুই শতাধিক গরু প্রস্তুত করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত বাজারে ভারতীয় গরু প্রবেশ করায় তিনি বেশ কিছু গরু বেচতে
পারেননি। এবার হানিফ অ্যাগ্রো ফার্মে তিন শতাধিক গরু থাকলেও কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুত কর। হয়েছে মাত্র ১২০টি গরু।

এরই মধ্যে খামারে পশু বিক্রি শুরু জয়েছে জানিয়ে হানিফ অ্যাগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী আবু হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছর বড় একটা ধাক্কা খেয়েছি ভারতীয় গরুর কারণে। তাই এ বছর গরু প্রস্তুত করেছি মাত্র ১২০টি। এর মধ্যে দুটি গয়াল রয়েছে। গয়ালগুলোর ওজন ৪৫০ থেকে ৫০০ কেজির মধ্যে; ২ লাখ ৮০ থেকে ৩ লাখে বিক্রি করব। আমাদের প্রতিটি মুহূর্ত পার হচ্ছে ভারতীয় গরু প্রবেশের চিন্তায়। জেলার হাজার হাজার খামারি একই ভয়ে আছেন। যদি ভারতীয় গরু প্রবেশ করে, তাহলে দেশীয় খামারিরা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’ তবে খামারিদের দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই উল্লেখ করে বিজিবি ও জেলা পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতীয় গরু যেন প্রবেশ করতে না পারে, সেদিকে সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, গত বছর কুমিল্লা নগর ও জেলার ১৭ উপজেলায় ৩৬ হাজার ৫৯৮ জন খামারি পশু পালন করেন কোরবানির ঈদে বিক্রির জন্য। এ বছর সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ৭৪ জনে। গত বছর মজুত পশুর সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৯৮ হাজার ৪৫৬টি; আর চাহিদা ছিল ২ লাখ ৮৮ হাজার ৭৮৮টি। সে হিসাবে উদ্বৃত্ত পশুর সংখ্যা ছিল ৯ হাজার ৬৬৮টি। তবে এ বছর চাহিদার তুলনায় উদ্বৃত্ত পশুর সংখ্যা বাড়লেও মজুত ও চাহিদার পরিমাণ কমেছে। এবার জেলায় ২ লাখ ৩৭ হাজার ৫৮৬টি পশুর বিপরীতে মজুদ রয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ৭৫২টি। সে হিসাবে এ বছর উদ্বৃত্ত পশুর সংখ্যা ২৩ হাজার ১৬৬টি। এ বছর জেলাজুড়ে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে মোট ৪১৯টি পশুর হাট বসতে যাচ্ছে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৩৯১টি।

গতকাল বুধবার সকালে নগরের কালিয়াজুড়ি এলাকার নুরজাহান অ্যাগ্রোতে গিয়ে দেখা গেছে, ঈদুল আজহার জন্য ৫২টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। যদিও গত বছর এই সংখ্যা ছিল শতাধিক। এরই মধ্যে খামারে গরু বিক্রি শুরু হয়েছে। এবার নুরজাহান অ্যাগ্রোর আকর্ষণ এক টনের বেশি ওজনের ‘বস’। পাকিস্তানি শাহিওয়াল জাতের গরুটি দেখতে ভিড় করছেন বিভিন্ন স্থান আসা মানুষজন। গরুটি সাত থেকে আট লাখের মধ্যে বিক্রির লক্ষ্য নিয়েছে খামার কর্তৃপক্ষ।
ভারতীয় পশু প্রবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা জানালেন জেলার অতিরিক্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেনও। তিনি বিজিবিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।

জানতে চাইলে বিজিবি কুমিল্লা ব্যাটালিয়নের (১০ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর আলী এজাজ বলেন, ‘কুমিল্লা সীমান্ত এলাকা দিয়ে এখন আর আগের মতো গরু চোরাচালান হয় না। এর মূল কারণ হচ্ছে কুমিল্লা সীমান্তের বেশির ভাগ এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে। তবে যে কয়েকটি স্থান দিয়ে বিগত সময়ে চোরাচালান বেশি হয়েছে, সেগুলোকে আমরা বিশেষ নজরদারিতে রেখেছি। সামনে কোরবানির ঈদ হওয়ায় আমাদের সতর্কতা, টহল এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’

কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান বলেন, ‘কোরবানির ঈদ সামনে রেখে অবৈধ পথে ভারত থেকে যাতে দেশে পশু আসতে না পারে, সে জন্য বিজিবিসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আমরা সমন্বয় করে কাজ শুরু করেছি।

আরো দেখুন